এবার সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের আন্দোলনে অংশ নেয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমনা বাবু ও তার কয়েকজন অনুসারীর বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে ছাত্রলীগ সভাপতি বাবুর রুমে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের পর ওই ছাত্রকে হল থেকে বিছানাপত্রসহ বের করে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা চেয়ে বন্ধুদের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। আর নিরাপত্তা শঙ্কায় রাজশাহী ছেড়ে গাইবান্ধার গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন ওই শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মোস্তফা মিয়া। তিনি সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফরহাদ হোসেন খান ও নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজা।
অভিযোগপত্র ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার কোটা সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলনে অংশ নেন মোস্তফা। বিষয়টি ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদকে জানান ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা। পরে ফরহাদ ভুক্তভোগীকে ফোন করে দেখা করতে বলেন। এতে শঙ্কিত হয়ে বিষয়টি ভুক্তভোগী মোস্তফা তার বিভাগের সিনিয়র আরিফ মাহমুদকে জানান।
পরে গত মঙ্গলবার আরিফের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের সামনে দেখা করেন মোস্তফা মিয়া। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন আরিফের বন্ধু ও অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শামীম রেজা। এরপর শামীমকে বিস্তারিত ঘটনা বললে তিনি ফরহাদ হোসেনকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘শিবির ধরছি, নিয়ে আসবো নাকি?’ পরে মোস্তফা মিয়াকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে গালিগালাজ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ২৩০ নম্বর (ছাত্রলীগ সভাপতির কক্ষ) কক্ষে নিয়ে যান তারা।
ওই কক্ষে নিয়ে যাওয়ার পর মোস্তফাকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে তার ফোন চেক করতে শুরু করেন ছাত্রলীগ সভাপতি বাবু। ফেসবুকে কোটা আন্দোলন নিয়ে পোস্ট দেখে রেগে যান ছাত্রলীগের সভাপতি। একই সঙ্গে আন্দোলনে যাওয়ার কারণে তাকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন তিনি। এ সময় তিনি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বলেন, ‘তুই শিবির করিস, স্বীকার কর।’ দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তাকে নির্যাতন করেন ছাত্রলীগ নেতারা। পরে মোস্তফা মিয়ার সঙ্গে ছাত্রলীগ সভাপতির এক অনুসারী পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের গণরুম থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে মোস্তফা মিয়া মোবাইলে বলেন, আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। মারধর করে সেদিনই হল থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা চলে এসেছি। কোটা আন্দোলনে যাওয়ায় শিবির অ্যাখ্যা দিয়ে তারা মারধর করেছে। ছাত্রলীগ সভাপতিসহ ৬ জন ছিল মারধরের সময়। বিকেল সাড়ে চারটায় বঙ্গবন্ধু হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে নেয়া হয় আমাকে। নির্যাতন করে সন্ধ্যা সাতটার দিকে ওই কক্ষ থেকে বের করে।
এসব বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে একাধিকবার মোবাইলে কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এদিকে সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ওই শিক্ষার্থীর পক্ষে তিনজন তাকে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তিনজন সহকারী প্রক্টরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সত্যতা পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।